ইরাকে তখন তুমুল যুদ্ধ। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দিকে ছুটছে। একটু আশ্রয়ের জন্য, ভালোভাবে বাঁচার জন্য। সেই ¯্রােতের সহযাত্রী নূরা আরকাভাজি (২০) আর তার পরিবার।
তারা যখন সার্বিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করছিল নূরার শরীরে তখন অনেক জ্বর। সীমান্ত রক্ষীদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন নূরার মা। তারা
ইংরেজি ভালো জানা একজনের কাছ পাঠালো। লোকটি মেসেডোনিয়া সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে আছেন। সেখানেই দেখা হয় নূরা ও তার ভালোবাসার মানুষ ববি দোদেভস্কির (৩৫) সঙ্গে। সেই থেকে পরিচয়। আর ভালোবাসার সূত্রপাত।
নূরা কুর্দি মুসলিম। ববি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। নূরাকে প্রথম দেখার পর থেকেই ভালো লেগে যায় ববির। এরপর আর পিছনে তাকাননি। গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেই ভালোবাসা পেতে আমি সব চেষ্টাই করেছি। যার কারণে এখানে দেশ ও ধর্মের বাধা ছিন্ন করা গেছে।’
ইরাকের সহিংস অঞ্চল দিয়ালায় থাকতেন ২০ বছরের নূরা। আইএস জঙ্গিরা তার বাবাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। বাবা প্রকৌশলী ছিলেন। জঙ্গিরা বাবাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ হিসেবে বিপুল অঙ্কের অর্থ দাবি করে।
এ বছরের শুরুতে নূরা, তার ভাই, বোন ও মা ঘর ছাড়েন। গন্তব্য জার্মানি। দীর্ঘযাত্রার পর তুরস্ক সীমান্ত পার হন। একটি নৌকায় করে গ্রিস পেরিয়ে মেসিডোনিয়ায় ঢুকছিলেন। আর সেখানেই দেখা হয় ববির সঙ্গে। ববি জানান, নূরাকে দেখামাত্র মনে হয়েছিল, বিশেষ কাউকে খুঁজে পেয়েছি। নূরার চোখে অদ্ভুত কিছু ছিল।
তাভানবস আশ্রয়শিবিরে অভিবাসীদের সীমান্ত পার হতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সে সময় ববি ও নূরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটাতেন। নূরা ও তার মাকে কাছের বাজারে নিয়ে যেতেন ববি। তাদের জন্য খাবার ও কাপড় কিনে দিতেন। নূরা ছয়টি ভাষা জানতেন। স্থানীয় রেডক্রস বাহিনীকে সহায়তা করতেন। অন্য পুলিশদের তুলনায় ববি অভিবাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। আর সেটি দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলেন নূরা।
এপ্রিল মাসের এক সন্ধ্যায় নূরাকে রেস্তোরাঁয় আমন্ত্রণ জানান ববি। নূরা বললেন, ববিকে তখন খুব ভীত মনে হচ্ছিল। ববি বারবার পানি পান করছিলেন। হঠাৎ করেই নূরাকে ভালোবাসার কথা বলেন। নূরার মনে হয়েছিল ববি তার সঙ্গে মজা করছেন। বলেছিলেন, তুমি আমার সঙ্গে মজা করছ। কিন্তু ববি অন্তত ১০ বার নূরাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাকে বিয়ে করবে?’
নূরা রাজি হয়ে যান। জানতেন, একজন অমুসলিমের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইবেন না মা-বাবা। তবে দমে যাননি। স্পষ্ট করে মা-বাবাকে জানালেন, ভালো একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর তাকেই তিনি বিয়ে করবেন। আর কাউকে বিয়ে করতে চান না। তবে মা-বাবা খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। খুব রেগেও ছিলেন। তবে দমাতে পারেননি তাকে। অবাশেষে বিয়ে হয়েছে তাদের। মেসিডোনিয়ায় আছেন তারা। প্রথম সন্তানের মা হতে চলছেন নূরা।পূর্বকোণ
পাঠকের মতামত